শ্যামপুরের পাঠাগারে অভিনব প্রর্দশনী

Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া নিউজ ২৪, শ্যামপুর- হারিয়ে যেতে বসা লোকাচার, লোকসংস্কৃতির নানান আঙ্গিককে তুলে ধরে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে শ্যামপুরের মরাল বাহিনী পাঠাগারে। কুমোরপাড়ার শিল্পীদের সৃষ্টির অজানা ইতিহাসকে তুলে আনা হয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে লোকভাবনায় লক্ষ্মী‌। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে লক্ষ্মী নিয়ে নানান লোকাচার। আর সেই লোকাচারকেই কুমোরপাড়ার শিল্পীরা নানান রূপে মূর্তি, সরায়,পটে ফুটিয়ে তুলেছেন। লক্ষ্মী মূর্তি পোড়ামাটিতে যেমন ফুটে উঠেছে, প্রকাশ পেয়েছে ধাতব গালাতেও। নানান দুর্লভ মূর্তি, পটকে সংগ্রহ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে মরাল বাহিনী পাঠাগারের পাঠক আশিস চক্রবর্তী। সেই সংগ্রহের সমাহার প্রদর্শিত হচ্ছে গ্রন্থাগারে। পেশায় স্কুল শিক্ষক আশিস এখন গ্রন্থাগারের কার্যকরী সমিতির সভাপতি ও স্কুল শিক্ষক। তিনি বলেছেন, লোক সংস্কৃতিকে খুঁজে বের করাটাই আমার নেশা। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে লোক সংস্কৃতির আঙ্গিকগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

নানান লোকাচার-সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটে উৎসব গুলিতে। কিন্তু এই লোকাচারের আড়ালে রয়েছে বিভিন্ন সংস্কৃতির আঙ্গিক। ধর্মীয় ভাবনা থেকে নয়, মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিদিনকার ভাবনাগুলি ফুটে ওঠে স্থানীয় মানুষের লোকাচার গুলিতে। সেই লোক সংস্কৃতির ভাবনাকে সাধারণের মধ্যে তুলে ধরতেই মরাল বাহিনী পাঠাগারে পাঁচ দিন ধরে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। যার সূচনার অনুষ্ঠানে এসে শ্যামপুরের মরাল বাহিনী পাঠাগারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজীবপুর অগ্রণী পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক শাশ্বত পাড়ুই।

কুমোর পাড়ার মৃৎশিল্পীদের হাতে তৈরি নানান ধরনের লক্ষ্মীর মূর্তি, লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা, বিভিন্ন হারিয়ে যাওয়া লোকাচারকে তুলে ধরতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন বলে জানা গেছে গ্রন্থাগার সূত্রে। প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন এলাকার লক্ষ্মী – গণেশ ঘট, পট,মুখা, বাহন, প্রতীক, চিহ্ন, আচার- সংস্কার ইত্যাদি। পাঠাগারের প্রদর্শনী কক্ষে ১৭৪ টি লোক সামগ্রী নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনীতে পশ্চিমবঙ্গের ৫২ টি অঞ্চলের লক্ষ্মী ও গণেশ ঘট যেমন রয়েছে। রয়েছে তৎকালীন বাংলাদেশের লক্ষ্মী সরা। যা পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতেও মিশে গেছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার কর্মকাররা কিভাবে তাদের শিল্প ভাবনাকে সরায় এঁকে লক্ষ্মীকে নানান শৈল্পিক আলোকে ফুটিয়ে তুলেছেন। নদীয়ার তাহেরপুর, উত্তর ২৪ পরগণার দত্তপুকুর, বর্ধমানের নতুন গ্রাম, কলকাতার কুমোরটুলির শিল্পীদের সৃষ্ট নানান ধরনের সরায়‌ ফুটে উঠেছে লোকাচারের নানান কথা‌। এক পুতুলের চিত্রে লক্ষ্মী, তিনপুতুলের রাধাকৃষ্ণ, সুরেশ্বরী, কাঠের পেঁচা, তিনপুতুল ময়ুরকৃষ্ণ রাধা, ভাস্কর্যময় সরা সংগ্রহ করা হয়েছে রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন জেলার কুমোরপাড়া ঘুরে।

যারা লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, লক্ষ্মীর নানান রূপকে তুলে ধরেছেন তারা নিজেরাই লক্ষ্মী লাভ থেকে বঞ্চিত। হারিয়ে যাচ্ছে কুমোরপাড়া‌। লোকভাবনায় লক্ষ্মী প্রদর্শনী’র উদ্বোধনে উদ্বেগের সঙ্গে একথা বললেন বিশিষ্টরা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুজারপুর গার্লস হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা কৃপা রানী কর্মকার ও কালিদহ গোহালদহ রসিকলাল মেমোরিয়াল হাইস্কুলেের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাক্তন শিক্ষক মধুসূদন প্রামাণিক, রাজীবপুর অগ্রণী পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক শাশ্বত পাড়ুই, গুজারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ সুন্দর বেরা, মরাল বাহিনী পাঠাগারের কার্যকরী সমিতির সভাপতি ও লোক সংস্কৃতি গবেষক আশিস চক্রবর্তী। প্রর্দশনী চলবে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *